সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা পাক, মানবতা মুক্তি পাক

Share

সমকামি হওয়া বা বিষমকামি হওয়া মানুষের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটা মানুষের জন্মগত বা প্রবৃত্তিগত, অল্প কিছু ক্ষেত্রে আচরনগত। আচরনগত সমকামিরা মূলত বিষমকামি হয়। যেমন বিভিন্ন মাদ্রাসায় সমকামিতার যেসব খবর আমাদের সামনে আসে তারা মূলত বিষমকামি। বিপরীত লিঙ্গের যৌনসঙ্গীর অভাবে এরা সমলিঙ্গের সাথে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করে।

একজন মানুষ সমকামি, বিষমকামি, উভকামি হতেই পারে। এর কোনটাই অস্বাভাবিক বা অনৈতিক আচরন নয়। অনেকেই সমকামিতাকে অপ্রাকৃতিক বা প্রকৃতি বিরুদ্ধ আচরন দাবী করে অবৈধ বলতে চায়। এই বিষয়টিকে বলা হয় প্রকৃতিগত কু্যুক্তি।“সাধারণত কী হয়”, “সাধারণত কী হয় না”- এর উপর ভিত্তি করে “কী হওয়া উচিৎ”, “কী হওয়া বাধ্যতামূলক”, “কী হওয়া উচিৎ নয়”, “কী করা যাবে না” এরকম নৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলে এই হেত্বাভাসটি সংঘটিত হয়। যেমন- সতীদাহ প্রথা যুগযুগ ধরে চলে আসছে। তাই এটি স্বাভাবিক এবং ভাল। কিন্তু, যুগযুগ ধরে চলে আসা মানেই কোন কিছু ভাল বা সঠিক হয় না। যুগযুগ ধরে চলে আসছে, তাই এটি ভাল মনে করার কোন যুক্তি নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে স্বাভাবিক- অস্বাভাবিক, ভালো-মন্দ নির্ধারিত হয়না। বেশিরভাগ মানুষের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষন থাকে বলে এটা স্বাভাবিক আর সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষন অস্বাভাবিক এই ধরনের দাবীও এক ধরনের লজিক্যাল ফ্যালাসি। যাকে বলা হয় জনপ্রিয়তার কু্যুক্তি। আর বলে রাখা ভাল, প্রকৃতিতে প্রানীকুলের নানা প্রজাতির ভেতর সমকামিতা, উভকামিতা, রুপান্তরকামিতার ভুরি ভুরি উদাহরন রয়েছে।

কোন প্রাপ্তবয়ষ্ক নারী বা পুরুষ উভয়ের সম্মতিক্রমে কার সাথে মানসিক বা শারীরিক সম্পর্কে জড়াবে এটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ সম্পর্ক হতে পারে পুরুষ-পুরুষ, পুরুষ-নারী কিংবা নারী-নারী। এ ব্যাপারে রাস্ট্র,সমাজ বা ধর্ম কোন নীতি নির্ধারন বা নিয়ম আরোপ করে দিলে সেটা হবে ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন।

যেখানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে এবং অপ্রকাশ্যে সমকামিদের ভেতর যৌনসম্পর্ককে বৈধতা দেয়া হয়েছে সেখানে ব্রুনেইতে সমকামিদের পাথর ছুড়ে হত্যার আইন চালু হয়েছে। এই ধরনের অমানবিক, বর্বর আইনের কঠোর সমালোচনা করলেও কম হয়ে যায়। কারো বেচে থাকার অধিকার খর্ব করাটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত পর্যায়। এই ধরনের আইন যেসব দেশে চালু আছে তাদের উপর অচিরেই আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা পাক, বর্বর আইন নিপাত যাক, মানবতা মুক্তি পাক।