একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?

Share

সমকামিতাকে সমাজের এক ব্যাধি মনে করে এই বিষয়টাকে ঘৃণা ভরে উল্লেখ করি আমরা সবসময়। যতই শিক্ষিত ডিগ্রীধারী হই না কেন আমরা, সমকামিতা শব্দটি শুনলেই মুখ বাঁকিয়ে মুখের অবয়বটাই মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে ফেলি। শুনলেই কেমন জানি  অনেকের  গা ঘিন ঘিন করতে থাকে। কাঠ মোল্লা, কট্টরপন্থী সকল ধর্মের মানুষ তো নগদে গালিগালাজের উপরেই রাখে। ধর্ম প্রাণ মানুষদের মুখের ভাষা সাথে সাথেই মুহূর্তেই মধ্যে বিশ্রী ভাবে পাল্টে যায়।

সমকামিতা প্রসঙ্গ আসলেই হয়ত টেবিল ছেড়ে উঠে যান অনেকেই অথবা জোর গলায় বলে বসেন এই বিষয় নিয়ে মোটেও কথা বলতে বা শুনতে চান না। গে , লেসবিয়ান, বাই সেক্সুয়াল, ট্রান্স জেন্ডার কাউকে দেখলেই সরে আসেন। মুহূর্তের মধ্যে এদের কাউকে দেখলে অ্যাটাকিং মুড এ চলে যান আপনারা। আপনারা সমকামিতাকে মনে করে থাকেন এটা প্রকৃতিবিরুদ্ধ নয়ত অস্বাভাবিক। আপনার এই ধারনা পোষণ করাও কিন্তু সম্পূর্ণ ভাবে একটা মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করার সমতুল্য। আপনারা অনেকেই সবসময় সমকামিতাকে সমাজবিরোধী বলে মনে করেন যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

আসলে  আমরা সমকামিতা কি বুঝি? মানুষ কেন সমকামি হয় আমরা কি জানি? ওদের জীবন যাপন এর ধরন কেমন আমরা কি জানি? অনেকেই আপনারা না জেনেই আজীবন ঘৃণা করে গেছেন এই মানুষ গুলোকে। মনে করেন এদের সমাজে বেঁচে না থাকাই ভাল। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে এ সকল মানুষ গুলোর মৃত্যুই কামনা করেন। ভাবেন এরা মরলে সমাজ রক্ষা পায়। ব্যাপারটা কি আসলেই তাই?

আমরা যারা ধর্ম মানি, মনে প্রানে সৃষ্টি কর্তার অস্তিত্বকে বুকে লালন করি, মুখে বলি আমরা ধর্ম প্রাণ মানুষ, আসলে ধর্ম আমরা কতটুকু বুঝি? আমার এই প্রশ্নকে আপনারা অনেকেই অবান্তর , ভিত্তিহীন, বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। করতেই পারেন। আপনার মন ।আপনার মর্জি। যা ইচ্ছা ভাবতেই পারেন। সেটা আপাতত সমস্যা নয়। আবার, অনেকেই ভাববেন এমন একটা প্রশ্ন করলাম কেন?

বলছি, আমাদের মধ্যে অনেকেই যারা ধর্ম মানি, বা চর্চা করি, একটা বিষয় অবশ্যই আমরা মানি সেটা হল- এই জগতের সকল কিছুই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। আমাদের পবিত্র ধর্ম গ্রন্থ গুলোও এই কথাই বলে। সৃষ্টিকর্তা যখন মানুষকে সৃষ্টি করলেন তখন তিনি মানুষের মধ্যে প্রানের সঞ্চার করেছিলেন কিভাবে, আপনাদের মনে আছে? অনেকেরই মনে থাকার কথা। যদি না থাকে তাদের উদ্দেশ্যে বলছি,

আল্লাহ বলেন, ﻭَﺇِﺫْ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺑُّﻚَ ﻟِﻠْﻤَﻼَﺋِﻜَﺔِ ﺇِﻧِّﻲْ ﺧَﺎﻟِﻖٌ ﺑَﺸَﺮًﺍ ﻣِّﻦ ﺻَﻠْﺼَﺎﻝٍ ﻣِّﻦْ ﺣَﻤَﺈٍ ﻣَّﺴْﻨُﻮْﻥٍ، ﻓَﺈِﺫَﺍ ﺳَﻮَّﻳْﺘُﻪُ ﻭَﻧَﻔَﺨْﺖُ ﻓِﻴْﻪِ ﻣِﻦ ﺭُّﻭﺣِﻲْ ﻓَﻘَﻌُﻮْﺍ ﻟَﻪُ ﺳَﺎﺟِﺪِﻳْﻦَ – ‘স্মরণ কর সেই সময়ের কথা, যখন তোমার প্রভু ফেরেশতাদের বললেন, আমি মিশ্রিত পচা কাদার শুকনো মাটি দিয়ে ‘মানুষ’ সৃষ্টি করব। অতঃপর যখন আমি তার অবয়ব পূর্ণভাবে তৈরী করে ফেলব ও তাতে আমি আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার প্রতি সিজদায় পড়ে যাবে’ (হিজর ১৫/২৮-২৯)

এটাই  তো ইসলাম ধর্মের বেসিক শিক্ষা। যদি মানুষকে আল্লাহতালা সৃষ্টি করেই থাকেন এবং মানুষ সৃষ্টির পর মানুষের মধ্যে আল্লাহ্‌তালার রূহ ফুঁকে দেন তাহলে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং বাস করেন। আর সৃষ্টিকর্তা যদি জগতের সকল কিছু সৃষ্টি করে থাকেন তাহলে উনি সমকামিতাকেও সৃষ্টি করেছেন। এবং সমকামি প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তাই বাস করেন। সৃষ্টিকর্তা যেমন তার সকল সৃষ্টিকে সমান ভাবে ভালবাসেন, তেমনি উনি সমকামিদেরও সমান ভাবেই ভালবাসেন।

যুক্তিগত ভাবে যদি দেখি, আপনাদের মধ্যে যারা ধর্মপ্রাণ মানুষ আছেন তারা যদি সমকামি মানুষদের ঘৃণা করেন তাহলে কি স্বয়ং সৃষ্টি কর্তাকেই ঘৃণা করছেন না? সমকামীদের মৃত্যু কামনা করে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার রূহ এর মৃত্যু কামনা করছেন না?  যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে আপনারা তো ধর্মের বেসিক জিনিসটাই মানছেন না। আরও পরিষ্কার করে বললে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে, আপনারা আপনাদের ধর্মের মূল শিকড় অথবা ভিত্তির বিরোধিতা করছেন। তাহলে আপনারা কি করে নিজেদেরকে ধর্মপ্রাণ মুনিম মানুষ বলেন, আমার বোধগম্যে আসে না। যেখানে  আপনারা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি কেই ঘৃণা অথবা হত্যা করতে চাইছেন!

আপনাদের কি মনে হয় সমকামি মানুষ গুলো ইচ্ছে করেই এরকম ভাবে সমকামি হয়েছে? যদি তাই মনে করে থাকেন তাহলে পুরো বিষয়টা সম্পূর্ণ ভাবে ভুল জানেন। বিষয়টি বুঝিয়ে বলছি।একজন সমকামি মানুষ আমার আপনার মতই আল্লাহ্‌র রূহ থেকে সৃষ্টি রক্ত মাংসে গড়া একজন মানুষ। আপনি যেভাবে বড় হন ছোট বেলা থেকে ঠিক সেভাবেই ওরাও বড় হয়। কিন্তু ওদের সমস্যা টা হয় শরীরের অভ্যন্তরে। অনেকের ক্ষেত্রে এটা প্রাকৃতিক ভাবেই হয়ে থাকে। জন্মের প্রথম দিকে অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারে না। বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যাপারটা বুঝতে পারে। সমকামি ছেলে বা মেয়ে বিপরীত লিঙ্গের দিকে আকৃষ্ট না হয়ে সম লিঙ্গের প্রতি  বেশী আকৃষ্ট হয়ে থাকে।

মনোবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছেন, একজন সমকামি ছেলের ভিতরে  অধিক মাত্রায় মেয়েসুলভ ভাব/আচরণ এর প্রভাব বিস্তার করে। এটা হরমোন জনিত কারনে হয়ে থাকে। এই কারনে সে ছেলে হয়েও যেহেতু মেয়েসুলভ আচরণ তার ভিতরে  অতিরক্ত মাত্রায় বিদ্যমান তাই  স্বাভাবিক ভাবে সে একজন ছেলের প্রতি আকৃষ্ট হয় বেশি। এ কারনে একজন মেয়ের প্রতি স্বভাব জনিত কারনেই তার কোন রকম আকর্ষণ কাজ করে না। তার ভিতরে এটাই কাজ করে আমি তো মেয়েই তাই একজন মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট হবার প্রশ্নই আসে না। ঠিক সেভাবেই একজন সমকামি মেয়ের ভিতরে অধিক মাত্রায় ছেলেসুলভ আচরণ বিদ্যমান থাকায় সে স্বাভাবিক ভাবেই একজন মেয়ের প্রতি আকৃষ্ট বেশি হয়। তাই তার কামবোধ একজন মেয়ের দিকেই তাকে আকৃষ্ট করে। এই আচরণ গুলো জন্মলব্ধ হবার দরুন কোন চিকিৎসা বা ওষুধ এর দ্বারা এর প্রতিকার একেবারেই অসম্ভব। হয় এভাবেই থাকতে হবে আজীবন না হলে জেন্ডার পরিবর্তন করে ছেলে হতে পারে একজন মেয়ে আবার একজন মেয়ে হতে পারে একজন ছেলে। অনেকেই এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে আছেন। আবার অনেকেই আছেন যাদের মধ্যে অর্ধেক ছেলে সুলভ আচরণ আবার অর্ধেক মেয়ে সুলভ আচরণ কাজ করবার দরুন তারা ছেলে মেয়ে উভয়ের প্রতিই আকৃষ্ট হয়ে থাকে।  আবার কোন মানুষের হরমোন জনিত প্রভাব এর কারনে এরকম আচরণের মাত্রা কম বেশি হতে পারে।

পৃথিবীতে অনেক সফল মানুষ আছেন যাদের মধ্যে অনেকেই  ট্রান্স জেন্ডার-

এডভোকেট জেনা তালাক্কভা কানাডিয়ান, ২৬ বছর বয়সী তরুণী। সফল মডেল এবং টিভি ব্যাক্তিত্ব।

এমেলিয়া মাল্টেপ, বাংলাদেশী, বর্তমানে কানাডায় আছেন। একজন গ্লামার মডেল। ছেলে হয়ে জন্মেছিলেন এখন মেয়ে হয়েছেন।

ঋতুপর্ণ ঘোষ, তিনি ছিলেন একজন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক। পরিচালক এর পাশাপাশি একাধারে তিনি ছিলেন অভিনেতা,লেখক এবং গীতিকার। ঋতুপর্ণ ঘোষ ছিলেন ভারতের এলজিবিটি সম্প্রদায়ের এক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব। জীবনের শেষ বছরগুলিতে তিনি রূপান্তরকামী জীবনযাত্রা নিয়ে নানা পরীক্ষানিরীক্ষা করছিলেন। তিনি নিজের সমকামী সত্ত্বাটিকে খোলাখুলিভাবে স্বীকার করে নেন, যা ভারতের চলচ্চিত্র জগতের খুব কম মানুষ করেছেন।

ডঃ মারসি বোয়ারস সর্বপ্রথম ট্রান্স জেন্ডার মহিলা যিনি এখন একজন  ডাক্তার। অপারেশন থিয়েটারে অপারাশনও করেন মানুষের।

জ্যানেট মক। তিনি একজন সফল লেখিকা। জ্যানেট  একজন ট্রান্স জেন্ডার এক্টিভিস্ট। তার প্রকাশিত বই গুলো ‘‘Redefining Realness: My Path to Womanhood, Identity, Love & So Much More.’’

ক্যারমেন ক্যারেইরা, সফল রিয়ালিটি টিভি স্টার।একজন প্যারডি পারফর্মার। “RuPaul’s Drag Race,” প্রোগ্রাম এর সিজন ৩ তে এসেছিলেন। ক্যারমেন,বিখ্যাত ফটোগ্রাফার ডেভিট লাচ্যাপলি ফিচারড মডেল হয়ে কাজ করেন।

এরকম আরও অনেক উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরা যায়। আবার আপনারা ব্যাক্তিগত ভাবে ইন্টারনেট এ সার্চ দিয়েও এসকল মানুষদের সম্পর্কে জানতে পারেন। এদের মধ্যে অনেকেই আছে যারা কর্মজীবনে সাধারণ মানুষদের চেয়ে অনেক বেশি সফলতা এবং খ্যাতি অর্জন করেছেন।

বিগত শতাব্দীগুলোতে, মনোবিজ্ঞান ছিল সমকামিতাকে একটি স্বতন্ত্র দশা হিসেবে গবেষণা করার ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান পন্থা। ২০শ শতাব্দী জুড়ে, মনোবিজ্ঞানের সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী রোগনির্ণয়ক আদর্শসমূহের পরিভাষায় সমকামিতাকে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে দেখা হত। গবেষণায় এই সিদ্ধান্ত যাচাইকরণ শুরু হওয়ার পর, তা সমকামিতাকে অসুস্থতা হিসেবে যথেষ্ট প্রমাণাদি উদ্ভাবনে ব্যর্থ হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আচরণিক ও সামাজিক বিজ্ঞানের বহু অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ একে মানসিক অসুস্থতা হিসেবে গ্রহণ করার মাঝে আবদ্ধ থাকেন। পরবর্তী বছরগুলোতে, অনেকেই এই সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলে দাবি করতেন, এবং মানসিক অসুস্থতার ডিএসএম নির্দেশিকার সঙ্গায়নেও প্রচলিত প্রভাবশালী সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা-ভিত্তিক বিশ্বাস এবং পুনর্বাসন সংস্থা ও অপরাধমূলক আইনি বিচার-সংস্থাগুলোর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

১৯৭০-র পর থেকে, বিশ্বজুড়ে বহু স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং আচরণগত-সমাজবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ সমকামিতাকে মানব যৌন অভিমুখীতার একটি স্বাস্থ্যকর প্রকরণ হিসেবে দেখেন, এবং বাদবাকি বিশেষজ্ঞরা একে অসুস্থতা হিসেবে বহাল রাখেন। ১৯৭৩ সালে, সমকামী অধিকার সংগঠনগুলোর ব্যাপক লবিং-এর ফলশ্রুতিতে মার্কিন মনোচিকিৎসক সমিতি মানসিক অসুস্থতা হিসেবে সমকামিতার সংজ্ঞাকে বাতিল করে। মার্কিন মনোচিকিৎসক সমিতির প্রতিনিধি কাউন্সিল ১৯৯৫ সালে এবং এরপর অন্যান্য সংস্থাগুলো উক্ত নতুন সংজ্ঞা অনুসরণ শুরু করে, যার মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তা গ্রহণ করে ১৯৯০ সালে।

বর্তমান বিশেষজ্ঞদের মতে, সমকামিতা কোন মানসিক ব্যাধি নয়। কয়েক দশক ধরে গবেষণা ও ক্লিনিকের অভিজ্ঞতার ফলে প্রধান প্রধান স্বাস্থ্য ও মনোস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এসব প্রবৃত্তি মানুষদের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতারই প্রতিনিধিত্বমূলক। নারী ও পুরুষের মধ্যেকার সম্পর্কের মতোই সমলিঙ্গীয় সম্পর্কও স্বাভাবিক ও স্বাস্থ্যকর।

আমরা যারা সমকামি নই বা আমাদের ক্ষেত্রে ছেলে ছেলেই আর মেয়ে মেয়েই হয়ে থাকি, আমরা স্বাভাবিক ভাবে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হই। সৃষ্টিকর্তা যাকে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন আমরা সেভাবেই আমাদের অনুভুতি ব্যক্ত করি। এবং অনেকেই এটাকেই স্বাভাবিক মনে করেন। আবার যারা সমকামি তাদের ক্ষেত্রেও ওরা যেভাবে চিন্তা করে ওটাই ওদের কাছে স্বাভাবিক লাগে। তাহলে, এখানে সেই সমকামি মানুষগুলোর দোষ টা কোথায় বলুন? সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির উপর তো কারো কোন হাত থাকে না তাইনা? সৃষ্টিকর্তা ওভাবেই ওদেরকে সৃষ্টি করেছেন। বরং আপনাদের মতো মানুষরাই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টির বিরোধিতা করছেন। এটা জেনেই করছেন। কিন্তু কেন করছেন? তাহলে কেমন মানুষ আপনারা?

বাংলাদেশের সমাজ সমকামিতাকে দণ্ডনীয় অপরাধ বলে মনে করে। সমকামিতার জন্য আলাদা ভাবে আইন করা হয়েছে। বাংলাদেশের আইনে সমকামিদের জন্য যা বলা হয়েছে-

আইন ও অপরাধের ধারা-

‘‘বাংলাদেশের সংবিধান-এ সকল নাগরিকের ধর্মীয় ও সামাজিক অধিকার দেয়া হলেও নৈতিক অবক্ষয়ভিত্তিক বিধিনিষেধ রয়েছে।

খন্ড II আর্টিকেল ১৯ – সকল নাগরিকের সমান সুযোগের অঙ্গিকার।

খন্ড III ধারা ২৭ – সকল নাগরিকের জন্য আইনের দৃষ্টিতে সমান অধিকার রয়েছে।

ধর্ম ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতায় উভয়ে প্রতিশ্রুতিশীল, কিন্তু অবশ্যই এই স্বাধীনতা “শালীনতা বা নৈতিকতা” ভিত্তিক বিধিনিষেধ সাপেক্ষে।

 একজন নাগরিক সংসদের একজন সদস্য হিসেবে প্রার্থিতা পাবে না যদি উক্ত নাগরিক কোন “অপরাধী হয়, অথবা দুশ্চরিত্র অপরাধ” এর দোষী সাব্যস্ত হয়।

বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা মোতাবেক সমকামিতা ও পায়ুমৈথুন শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, যার শাস্তি দশ বছর থেকে শুরু করে আজীবন কারাদণ্ড এবং সাথে জরিমানাও হতে পারে।

৩৭৭. প্রকৃতিবিরুদ্ধ অপরাধ: কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কোন পুরুষ, নারী বা পশু প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যৌন সঙ্গম করে, তবে তাকে আজীবন কারাদণ্ড দেয়া হবে, অথবা বর্ণনা অনুযায়ী নির্দিষ্টকালের কারাদণ্ড প্রদান করা হবে যা দশ বছর পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, এবং এর সাথে নির্দিষ্ট অঙ্কের আর্থিক জরিমানাও দিতে হবে।

 ব্যাখ্যা: ধারা অনুযায়ী অপরাধ প্রমাণে যৌনসঙ্গমের প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে লিঙ্গপ্রবেশের প্রমাণ যথেষ্ট হবে।

৩৭৭ ধারার ব্যাখ্যায় পায়ুসঙ্গমজনিত যে কোন যৌথ যৌন কার্যকলাপকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। একারণে, পরস্পর সম্মতিক্রমে বিপরীতকামী মুখকাম ও পায়ুমৈথুনও উক্ত আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হতে পারে।’’

কিন্তু কেন এই আইন? আমরা তো এই অসহায় মানুষগুলোর আসল সমস্যার কথাই বুঝতে না পেরে এদের প্রতি নির্মম অবিচার করছি। আমাদের সকলের উচিৎ এই আইন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। প্রয়োজনে এই আইন কে তুলে দেয়া উচিৎ। ওরাও তো মানুষ। আপনার, আমার মতোই মানুষ। স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার তো ওদেরও আছে। এই মানুষ গুলো যে কত অসহায় আর অসহনীয় ভাবে দিন কাটাচ্ছে আপনারা যদি খুব কাছ থেকে ওদের সাথে না মিশবেন, না দেখবেন তারা কোনদিন বুঝতেই পারবেন না। অন্যায় ভাবে এই মানুষগুলোকে সারাজীবন আপনারা ভুল বুঝে যাবেন আর ঘৃণাই করবেন। এ তো রীতিমত অন্যায়। এ তো পাপ। এ তো রীতিমত অবিচার করা।

আমাদের দেশের এক স্তরের মানুষ এভাবেই হত্যা করলেন রূপবান ম্যাগাজিন এর সম্পাদক এর একজন জুলহাজ মান্নান ও  তার বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বি তনয়কে। আপনাদের চোখে এরা ঘৃণিত অন্যায় করেছে। সমকামিতার পক্ষ নিয়ে লিখেছে। দেশে সমকামিতাকে লিগ্যাল করার জন্য, সমকামি মানুষদের স্বাভাবিক ভাবে স্বীকৃত দেবার জন্য লড়েছে। এরা শুধু স্বাভাবিক ভাবে আপনাদের মাঝে বাঁচতে চেয়েছে, যা আপনাদের চোখে অস্বাভাবিক এবং অন্যায়। এরা কলম কে প্রতিবাদের অস্ত্র করে লিখেছে। আর আপনারা ধরেই নিয়েছেন এরা সমাজের প্রতি অত্যন্ত খারাপ কাজ করে সমাজের সুস্থ মানুষ গুলোকে নষ্ট করে দিচ্ছে।

অনেকের মনে আবার প্রশ্ন আসতেই পারে, আমি কেন আমাদের দেশের মানুষকে এই হত্যা কাণ্ডের দায়ে অভিযুক্ত করলাম? আমি এই জন্য দায়ী করলাম, কারন আপনারা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুভাবেই এই হত্যাকাণ্ড কে সমর্থন করেছেন। অনেকেই মনে মনে আরও ভেবেছেন, সমাজ এর কলঙ্ক গুলো শেষ হয়ে গেছে ভালই হয়েছে। এদেরকে এতদিন বাঁচিয়ে রাখাই তো উচিৎ হয় নি। এত বড় সাহস আবার ম্যাগাজিন বের করে এই সকল নাপাক ও সমাজবিরোধী কাজে মদদ দিচ্ছিল সমাজকে। দেখেছেন, আপনারা কি নির্মম আর নির্দয় ভাবে সমর্থন দিয়ে এই দুই নিরাপরাধ মানুষকে মেরে ফেললেন? আফসোস! আপনারা  মানুষ হয়ে মানুষই চিনতে পারলেন না।

আমি আগেও যেমন বলেছি এখনও বলছি, সমকামি মানুষগুলো আমার আপনার মতই মানুষ। এরা শুধু শারীরিক এবং আচরণগত দিক থেকে সমকামি হয়। এটা ওদের দোষ নয়। ওরা ইচ্ছা করে এমন হয় না। ওদের প্রতিবন্ধকতা গুলো বোঝার চেষ্টা করুন। এদেকে স্বাভাবিক ভাবে সমাজে বাঁচতে দিন। এদেরকে দেখে ঘৃণায় আপনার মুখটা ফিরিয়ে নেবেন না। দোহাই আপনাদের, এদেরকে মানুষ ভাবতে শিখুন। এদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করবেন না দয়া করে। একজন মানুষের মতো করে এদেরকে বাঁচার সুযোগ করে দিন। কারন মানুষ ,মানুষের জন্য। জীবন জীবনের জন্য। একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না?

সুত্রঃ

ইসলামী ধর্ম গ্রন্থ আল কোরআন

LGBT wikipedia

সমকামিতা – উইকিপিডিয়া

সমকামিতা ও মনোবিজ্ঞান

রূপবান ম্যাগাজিন

www.metro.us