দ্বৈততা

Share

জুলহাজ মান্নান। বাদামি রঙের পাতলা গড়নের ছোট্ট একটা মানুষ। যেদিন থেকে পরিচয়, একটা জিনিস নিয়ে তার সাথে মনের ভেতর অনেক ঈর্ষা হতো সেটা আর কিছু না; শুধুমাত্র তার সেই লম্বা রেশমি চুল। তার সঙ্গে পরিচয় ২০০৭ এ। বড়ভাইয়ের মতোই শ্রদ্ধা এবং ভালবাসতাম। আজও বাসি। আমাদের মধ্যে প্রায়ই অনেক মান-অভিমান চলতো। আমার বয়স তখন অনেক কম, সবকিছু বুঝতামও কম। বলতে পারেন খানিকটা পথপ্রদর্শক হয়ে আমাকে অনেক কিছু বুঝিয়েছেন, শিখিয়েছেন এবং নতুন করে অনেক কিছু দেখিয়েছেন। মাঝে মধ্যে যখন আমাদের মনোমালিন্য হতো হঠাৎ করেই কিছুদিনের জন্য আমাদের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যেতো আর ঐদিকে আমার মা বলতেন, ‘কিরে তোর বড়ভাইটার কোন খবর নেই যে, তুই কি কিছু করেছিস?’

২৫শে এপ্রিল, ২০১৬। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা হবে। আমি সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরে কাপড় ছেড়ে গোসলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমার ফোনটা বেজে উঠলো। আমার মা ওপাশ থেকে কান্না শুরু করলো। বাকিটুকু আর বলার প্রয়োজন আছেই বলে আমি মনে করছি না।

এ কেমন দেশে বাস করি আমরা যেখানে আমাদের কোন ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই? মত প্রকাশের কোন সুযোগ নেই? সংবিধান যেখানে রাষ্ট্রের সকল মানুষকে সমঅধিকার দিয়ে এসেছে সেখানে ১৮৬০ সালের পেনাল কোডের ৩৭৭ ধারা, ধর্মীয় মৌলবাদ আর সামাজিক সংকীর্ণতা আমার মতো লাখো বাংলাদেশী মানুষের জীবনকে আজ ভাবায়, এরপর কি আমার মায়ের কোল খালি হবে?

জেনে রাখা ভালো, সমকামিতা কোনো পশ্চিমা সংস্কৃতি নয়। একটু বই ঘাঁটুন। উত্তরটা স্বয়ং নিজেই পেয়ে যাবেন বলে আশা রাখি।