Type to search

যৌন সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় নির্যাতনের ইতিহাস

অন্যান্য

যৌন সংখ্যালঘুদের উপর ধর্মীয় নির্যাতনের ইতিহাস

Share

ধর্মের উৎপত্তি কিভাবে হয়েছিলো – তা কি আপনার জানা আছে? আসলে ধর্মের উৎপত্তি হয়েছিলো মানুষের মনের কিছু অজানা ভয় থেকে। মানব জাতীর উদ্ভবের পর থেকেই প্রাকৃতিক নানা ধরনের দুর্যোগ মানুষের মনে এক ধরনের অলৌকিক ভয়ের সৃষ্টি করে। এবং এ সকল দুর্যোগ থেকে বাঁচতে এবং বিশাল এই প্রকৃতিকে শান্ত রাখতে মানুষ বিভিন্ন ধরনের বস্তুর আরাধনা শুরু করে। কখনও চন্দ্রের, সূর্যের, নদীর, গাছপালার, বাতাসের, পাহাড়ের, বড় পশু সহ নানা ধরনের জিনিসের পূজা-অর্চনা করতো মানুষ, এবং ভাবতো এসকল বস্তুকে আরাধনা করলে প্রাকৃতিক বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে, এবং এ ধরনের মানসিকতা আজও মানুষের মনে দেখা যায়।

ধর্মের উৎপত্তি কিংবা এর শুরুর দিকের ইতিহাস দেখলেও জানা যায় যে প্রাচীন সময়ে ধর্ম বা এ সকল অন্ধবিশ্বাসগুলো অনেকটাই ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এবং মানুষ যখন আস্তে আস্তে সংঘবদ্ধ হওয়া শুরু করলো তখন থেকেই ধর্মের প্রসারও বাড়তে লাগলো। এই যুগের ধর্ম ও আর আগের যুগের ধর্মের মধ্যে আসলে বিস্তর পার্থক্য বিদ্যমান। সেই সময়ে ধর্ম অল্প কিছু আচার অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু একসময় কিছু চতুর ধূর্ত ব্যক্তি সমাজের নিয়ন্ত্রণ নিজের দখলে নেয়ার জন্য নানা গল্প,রুপকথা আর ভয়ভীতি সমাহার করে ধর্মের ক্ষেত্র বাড়াতে থাকে। পুরুষদের হাতে রচিত এসব ধর্ম নারীদের শুধু মাত্র ভোগ্য বস্তুতে পরিণত করার প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখে। এক সময় নারীর পাশাপাশী তথাকথিত পুরুষালী আচারণের বাইরে কেউ গেলেই তাকে পুরুষ জাতীর জন্য অমর্যাদাকর বিবেচনা করে হত্যার নানা ফন্দি ফিকির করা হয় ধর্মের মাধ্যমেই।


প্রাচীন ইহুদী ধর্মের আগে যৌন সংখ্যালঘুদের এসব শাস্তির বিধান ছিল না বরং গ্রহণযোগ্যতাই ছিল বেশি। ইহুদী ধর্মের আদিপুস্তকের ১৯ নং অনুচ্ছেদেরর বর্ণনাগুলো দেখলে ধর্মের পুরুষালীতার কিছুটা ধারণা মিলবে। আদিপুস্তুকের ১৯ঃ৮ নম্বার আয়াতের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় লূত তার দুই মেয়েকে সবার হাতে তুলে দিয়ে বলতেছে ‘এদের সাথে যা ইচ্ছা কর’। একজন নবীর মুখে এরকম কথা কতটা বেমানান সেটা সুস্থ্য মস্তিস্কের যে কেউ বুঝবে।
ইহুদী ধর্মের আগে প্যাগান ধর্মে সমকামীদের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা ছিল। প্রথম ইহুদী ধর্মই লুতের কাল্পনিক কাহিনীর অবতরণ ঘটিয়ে সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষের সূত্রপাত ঘাটায়। আজকের এই সময়েও যারা ডেড সি এবং লূতের সেই কাহিনীর দোহায় দিয়ে সমকামীদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ায় তাদের ধারণা যে একবারে ভ্রান্ত তা প্রমাণ করতে বেশিক্ষণ লাগবে না।
ডেড সি তৈরী হওয়ার সময়কাল ও প্রকৃত কারণ এবং তথাকথিত লূতের সময়কালটা লক্ষ্য করলেই সব গোজামিল পরিষ্কার ধরা পড়বে। ইহুদী ধর্মের প্রথম দিকেও সমকামীদের হত্যা করা হত না বরং বিশ্বাস করা হত ঈশ্বর নিজে সমকামীদের শাস্তি দিবেন। কিন্তু কোন ঈশ্বরই তো পৃথিবীতে এসে শাস্তি দেয়ার ক্ষমতা রাখেন না হয়ত এটা বুঝতে পেরেই প্রভাবশালী ইহুদী ধর্মগুরু লিভাই সমকামীদের হত্যার বিধান দেন।
রাব্বাই আসহা নামে আরেক ধর্মগুরু ভূমিকম্পের কারণ হিসেবে সমকামীদের দায়ী করেন। আজকের যুগে এই সব বক্তব্য চরম হাস্যকর। তবে জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়ে যাওয়া ইহুদী জাতীকে বেশি দিন এসব অন্ধবিশ্বাসে আবদ্ধ রাখতে পারেনি ধর্মগুরুরা। তাই ইহুদী সংখ্যাগরিষ্ট রাষ্ট্র ঈস্রাইলে সমকামীরা স্বাধীন জীবন যাপন করছে। তবে ইহুদী ধর্মগুরুদের সেই সব বিধান খৃষ্টানদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছিল। যার ফল স্বরুপ ৩১২ সালে সম্রাট কন্সটান্টিন সম্রাট ম্যাক্সেন্টিয়াসের বিরুদ্ধে জয় লাভ করে খৃষ্টান ধর্মকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনার পর তারই পুত্র কন্সটান্স ৩৪২ সালে প্রথম রাষ্ট্রীয়ভাবে সমলিঙ্গের বিবাহ নিষিদ্ধ করেন। ৩৯০ সালে খৃষ্টান সম্রাট ভেলেন্টিনিয়ান ২, থিওডোসিয়াস ১ সমকামীদের অপরাধী ঘোষনা করে পুড়িয়ে মারার বিধান দেন। খৃষ্টান ধর্মগ্রন্থও এসব অমানবিক বিধান তৈরী করতে উস্কানি দেয়।
বাইবেলে বলা হয় ঈশ্বরকে অস্বীকার করার কারণে মানুষকে সমকামী বানিয়ে শাস্তি দেয়া হয়। অথচ হিসেব করলে দেখা যাবে ঈশ্বরে বিশ্বাসে সমকামীর সংখ্যা কম নয়। বাইবেলের কিছু সমকামী বিদ্বেষী বক্তব্য হচ্ছেঃ সমকামিতা এক রকমের পাপ (আদি পুস্তক ১৯:১-১৩; লেবীয় ১৮:২২; রোমীয় ১:২৬-২৭; ১ করিন্থীয় ৬:৯), যারা সমকামিতায় “দোষী”, তারা ঈশ্বরের রাজ্যের অধিকার পাবে না (১ করিন্থীয় ৬:৯)। তবে বাইবেল সমকামী একেবারে হত্যা করতে হবে এমনটা বলে না। বাইবেল বলে “যারা যীশুকে উদ্ধারকর্তা বলে বিশ্বাসে গ্রহণ করেছে, তাদের সকলকেই সমকামিতা সহ সকল পাপের উপরে বিজয়ী হবার শক্তি দিতে ঈশ্বর প্রতিজ্ঞা করেছেন (১ করিন্থীয় ৬:১১; ২ করিন্থীয় ৫:১৭; ফিলিপীয় ৪:১৩)।
কিন্তু খৃষ্টান ধর্মগুরুরা বাইবেলের এই বিধানে থেমে থাকে নি বরং নিজেরা সমকামীদের জন্য অমানবিক বিধান তৈরী করেছে। খৃষ্টান সম্রাট জাস্টিনিয়ান ইহুদী ধর্মগুরু রাব্বাই আসহার মতোই সমকামীদের ভূমিকম্প, দূর্ভিক্ষ ও মহামারীর জন্য দায়ী করেন। ইতালিতে ১৩৩২ সাল থেকে ১৫০২ সাল পর্যন্ত সতের হাজার মানুষকে সমকামিতার অজুহাত দিয়ে হয়রানি করা হয়। ১৭৪২ সালেই একজনকে সমকামিতার কারণে হত্যা করা হয় এবং পরবর্তী ছয় বছরে আরও তেরটি মামলা পারিচালিত হয়। ১৩৫৪ সালে রোলান্দিনো নামের একটি ব্যক্তিকে পুড়িয়ে মরা হয়। ১৩৬৫ গিওভান্নি দা গিওভান্নি নামের আরেক ব্যক্তিকে গাধার পিঠে চড়িয়ে শহরে ঘুরিয়ে, লিঙ্গচ্ছেদন করে, লোহিত তপ্ত শলাকা পায়ুপথে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়। ১৪৯৪ সালে ডোমিসিয়ান পাদ্রী গিরোলামো স্যাভোনারোলার রাজনৈতিক ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে ১৪৯৫ থেকে ১৪৯৭ সালের মধ্যে ৭৩১ জনকে সমকামিতার অভিযোগে প্রহসনমূলক বিচারে হয়রানি করা হয়। আরও হত্যা করা হয় জন এথেরন,মানবাতাবাদী ইতিহাসবিদ জ্যাকোপো বোনভাডিও, ওয়াল্টার হাঙ্গারফোর্ড, সুইডিস রুপান্তরকামী ওলসডটার,ফরাসি কম্পোজার ডমিনিট ফিনোটকে। ১৯৯৮ সালে ম্যাথু শেফার্ড নামে একজন মেধাবী সমকামী যুবক বন্ধুদের হাতে হত্যার শিকার হয় ও ২০০৩ সালে আমেরিকায় ছয়জন সমকামী নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়।
রাণি ভিক্টোরিয়া খৃষ্টান ধর্মদ্বারা প্রভাবিত হয়ে ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোত দৈর্ঘ্য দিন ধরে ৩৭৭ ধারার মতো একটি কালো আইন রেখে গিয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে এসব মানবতাবিরোধী কাজের জন্য বর্তমান খৃষ্টান ধর্মগুরুরা এবং ব্রিটিশ রাজ পরিবার ক্ষমা চেয়ে নিজেদের পরিবর্তন করতে পেরেছে। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে সমকামীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আইন তুলে দিয়েছে। সব ধর্ম মিলে সমকামীদের প্রতি যা অমানবিক বিধান চালু করেছিল ইসলাম ধর্ম তার সবগুলোকে গ্রহণ করেছে এবং এখনও সেই অমানবিক বিধান চালুও রেখেছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ গুলোতে। সমকামীদের প্রতি ইসলামিক অমানবিক বিধানগুলো কোরআন হাদিস থেকে দেখে আসি।
কারোর ব্যাপারে সমকাম প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তি স্বরূপ হত্যা করতে হয়।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ وَجَدْتُمُوْهُ يَعْمَلُ عَمَلَ قَوْمِ لُوْطٍ فَاقْتُلُوْا الْفَاعِلَ وَالْـمَفْعُوْلَ بِهِ.
‘‘কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে’’। (আবূ দাউদ ৪৪৬২; তিরমিযী ১৪৫৬; ইব্নু মাজাহ্ ২৬০৯; বায়হাক্বী ১৬৭৯৬; হা’কিম ৮০৪৭, ৮০৪৯)
উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবাদের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
اُرْجُمُوْا الْأَعْلَى وَالْأَسْفَلَ، اُرْجُمُوْهُمَا جَمِيْعًا.
’’উপর-নীচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো’’। (ইব্নু মাজাহ্ ২৬১০)
আবূ বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ যুবাইর (রাঃ) এবং হিশাম বিন্ আব্দুল্ মালিক (রাহিমাহুল্লাহ্) সমকামীদেরকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।
মুহাম্মাদ বিন্ মুন্কাদির (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
كَتَبَ خَالَدُ بْنُ الْوَلِيْدِ إِلَى أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ ـ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ـ أَنَّهُ وَجَدَ رَجُلًا فِيْ بَعْضِ ضَوَاحِيْ الْعَرَبِ يُنْكَحُ كَمَا تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ، فَجَمَعَ لِذَلِكَ أَبُوْ بَكْرٍ أَصْحَابَ رَسُوْلِ اللهِ ، وَفِيْهِمْ عَلِيُّ بْنُ أَبِيْ طَالِبٍ ، فَقَالَ عَلِيٌّ : إِنَّ هَذَا ذَنْبٌ لَمْ تَعْمَلْ بِهِ أُمَّةٌ إِلاَّ أُمَّةً وَاحِدَةً، فَفَعَلَ اللهُ بِهِمْ مَا قَدْ عَلِمْتُمْ، أَرَى أَنْ تَحْرِقَهُ بِالنَّارِ، فَاجْتَمَعَ رَأْيُ أَصْحَابِ رَسُوْلِ اللهِ  أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ، فَأَمَرَ بِهِ أَبُوْ بَكْرٍ أَنْ يُّحْرَقَ بِالنَّارِ.
‘‘খালিদ্ বিন্ ওয়ালীদ্ (রাঃ) একদা আবূ বকর (রাঃ) এর নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোন এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয় যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবূ বকর (রাঃ) সকল সাহাবাদেরকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাঁদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ‘আলী (রাঃ) ও উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন: এ এমন একটি গুনাহ্ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহ্ তা‘আলা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবূ বকর (রাঃ) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়ার ফরমান জারি করেন’’।
(বায়হাক্বী/শু‘আবুল্ ঈমান, হাদীস ৫৩৮৯)
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
يُنْظَرُ أَعْلَى بِنَاءٍ فِيْ الْقَرْيَةِ، فَيُرْمَى اللُّوْطِيُّ مِنْهَا مُنَكَّسًا، ثُمَّ يُتْبَعُ بِالْحِجَارَةِ.
‘‘সমকামীকে মহল্লার সর্বোচ্চ প্রাসাদের ছাদ থেকে উপুড় করে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার উপর পাথর মারা হবে’’।
(ইব্নু আবী শাইবাহ্, হাদীস ২৮৩২৮ বায়হাক্বী ৮/২৩২)
সমকামীর জন্য পরকালের শাস্তি হচ্ছে আল্লাহ্ তা‘আলা তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না।
‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
لَا يَنْظُرُ اللهُ إِلَى رَجُلٍ أَتَى رَجُلًا أَوِ امْرَأَةً فِيْ الدُّبُرِ.
‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোন মহিলার মলদ্বারে গমন করে’’। (ইব্নু আবী শায়বাহ্, হাদীস ১৬৮০৩; তিরমিযী ১১৬৫)
কতটা অমানবিক ও নোংরা এসব বিধান। অথচ বহু বিবাহ, বাল্য বিবাহ, যৌন দাসি রাখা জায়েজ কিন্তু নিরপরাধী সমকামীদের জন্য রাখা হল এমন অমানবিক বিধান। ১৯৫ টি দেশের মধ্যে যে ৭০ টি রাষ্ট্রে সমকামিতা অপরাধ তার বেশির ভাগ রাষ্ট্রই মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ট দেশ। ৭ টি মুসলিম দেশে সমকামিতা করলে মৃত্যুদণ্ডের ন্যায় বিধান রাখা হয়েছে। দেশগুলো হলো: সৌদি আরব, ইরান,মৌরিতানিয়া, উত্তর নাইজেরিয়া , সুদান এবং ইয়েমেন। ১৯৭৯ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ইরানে চার হাজার ব্যক্তিকে সমকামিতার জন্য হত্যা করা হয়। ২০০৫ সালে ইরানে দুইজন সমকামী যুবকে হত্যা করে ট্রাকে করে পুরো শহর ঘোরানো হয়। ১৯৯৮ সালে আফগানিস্থানের কান্দাহারে তিনজন সমকামীকে জীবন্ত মাটি চাপা দেয়া হয়। ইরাকে ২০০৯ সালে সাত মাসে গুপ্ত হত্যার শিকার হয়। বাংলাদেশে দুজন সমকামীকে হত্যা করা হয়। কয়েক দিন আগে ইন্দোনেশিয়ায় দুজন লেসবিয়ানকে প্রকাশ্য বেত্রাঘাত করা হয়। সৌদি আরবে মানুষের পাশাপাশি সমকামিতার কারণে একটি ঘোড়াকেও হত্যা করে। হিন্দু ধর্মে সমকামীদের হত্যার বিধান না থাকলেও মনুসংহিতায় বয়স্ক নারী সমকামীর শাস্তি গাধার পিঠে ঘোরান এবং দুটি আঙ্গুল কেটে দেয়া, কুমারী সমকামীর শাস্তি দুইশো মুদ্রা জরিমানা ও দশটি বেত্রাঘাত। পুরুষ সমকামীর শাস্তি হচ্ছে জাতীচ্যুত এবং কাপড়সহ জলে ডুব দেয়া।
সম্প্রতিক সময়ে ভারতে ধর্মগুরুদের বিরোধীতা সত্বেও আদালত কর্তৃক সমকামীদের বৈধতা দান প্রশংসার যোগ্য। পরিশেষে বলব, যে সমস্ত ধর্ম আজকের বিজ্ঞানের যুগেও কল্পকাহিনীর উপর ভিত্তি করে বিনা কারণে সমকামী বিদ্বেষ ছাড়াচ্ছে সেই সব ধর্মকে বয়কট করা এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে নিষিদ্ধ করা উচিৎ।