Type to search

সংগ্রাম

প্রবন্ধ সমূহ

সংগ্রাম

Share

পরিচয় হয়েছিল দুই বছর হবে কিন্তু মনের মিলের কারণে সবসময় মনে হয়েছে দুজন দুজনকে চিনি বহু বছর। এটা ওনার একটা অসাধারণ গুণ ছিল। উনি নতুন কাউকে এমনভাবে বরণ করে নিতেন যেন মনে হত অনেক দিনের পরিচয়। জুলহাজ ভাইয়ের সাথে আমার অনেক ছোট-বড় স্মৃতি থাকলেও ২০১৬ সালের ১৪ই এপ্রিল আমার মনে থাকবে যতদিন বাঁচবো। উনার মৃত্যুর মাত্র এগারো দিন আগে ঘটে যাওয়া ঐ ঘটনা আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে অকল্পনীয়ভাবে। সেদিন জুলহাজ ভাইয়া আর তনয় ভাইয়া হন্য হয়ে যেভাবে আমাকে বিপদ থেকে রক্ষার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তার জন্য আমি চির কৃতজ্ঞ। অন্য কেউ হলে হয়ত আমাকে ফেলে রেখে ফোন বন্ধ করে নিজ নিজ নববর্ষ উদযাপনে ব্যস্ত থাকত। তো ঘটনাটা একটু খুলে বলি।

১৩ই এপ্রিল ২০১৬। সকাল থেকেই আমরা সবাই জুলহাজ ভাইয়ার বাসায়। আজকে শেষ দিন। এতদিনের প্রস্তুতির আজকে সমাপ্তি। ওইদিন ব্যক্তিগত কিছু কারণে আমার মন খারাপ ছিল। জুলহাজ ভাইয়াও মনে হয় তা বুঝতে পেরেছিলেন তাই ছোটখাটো জোকস করে হাসানোর চেষ্টা করছিলেন। দুপুরের দিকে এতদিনের বানানো রঙ্গিন কাগজের ফুল, ঝুড়ি, মুকুট নিয়ে আমরা রওনা দিলাম চারুকলা এর উদ্দেশ্যে। ছয়জনের জন্য তিনটি রিকশা নেওয়া হল। আমি আর জুলহাজ ভাইয়া একই রিকশায়। কিছুক্ষণ আমরা কসরত করলাম কিভাবে এত কিছু সামলিয়ে রিকশায় বসব। শেষে কোনভাবে বসা হলেও দম বন্ধ হয়ে আসছিল দুজনেরই। এতো রংবেরঙের বাহারি জিনিস একসাথে রিকশায় দেখে রাস্তার বাচ্চাকাচ্চারা রিকশার পিছনে ছুট। কাছে যারা ছিল তারা তো রীতিমত কাগজের ফুলের সুতো ধরে টানাটানি করছিল। উনি হালকা ধমকের সুরে বললেন “এমন করছ কেন, জীবনে দেখনি?” পরে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন “আমিও কি গাধা, এদের জীবনই বা হইসে কতটুকু যে কিসু দেখবে?” জানিনা কেন কিন্তু এটা শুনে আমি দশ মিনিট হাসি থামাতে পারিনি। কিছুক্ষণ পর হুট করে উনি খুবই সিরিয়াস হয়ে গেলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন “আপনার কি মনে হয়, কালকে র‍্যালিতে ওদের কারণে কোন ঝামেলা হবে?” এখানে বলে রাখি ওরা কারা।

রংধনু র‍্যালি ২০১৪ ও ২০১৫ সালেও হয়েছিল। কিন্তু তখন রংধনু থেকে ছয়টি রং নিয়ে তৈরি করা সমকামীদের প্রতীকের মর্মার্থ মানুষ কমই বুঝত। ২০১৫ সালে যখন আমেরিকায় সমকামী বিয়ে বৈধ করা হয় ও ফেসবুকে রেইনবো ফিল্টার চালু হয় তখন রংধনু জিনিসটা কি তা সাধারণের মস্তিষ্কে ঢুকল। এরপর রূপবান যখন ২০১৬ সালের র‍্যালির জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট তৈরি করে সেটা ভাইরাল হয়ে যায় এবং সেটাকে বিরোধিতা করে আরেকটা ইভেন্ট তৈরি হয়। রূপবানের কয়েকজন সদস্যের ছবি ও ফেসবুক প্রোফাইল শেয়ার করা হয়েছিল ঐ গ্রুপে সাথে প্রাণ নাশের হুমকি। তাদের মধ্যে কোনভাবে আমার ছবিও চলে আসে। তারপর শুরু হল হুমকি আর গালির বন্যা। এমন কোন ধরণের হুমকি নেই যা পোষ্ট করা হয়নি। শাহবাগের চত্বরেই কোপানো হবে এটা ছিল কমন একটা থ্রেট। গত দুই বছর এই সময় উৎসব উৎসব ভাব থাকলেও এবার আমাদের সবার মনে ছিল ভয়। সবার মনে কেমন জানি একটা দুশ্চিন্তা, “কোন অঘটন যদি ঘটে যায়?” তো জুলহাজ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে আমি বললাম, “কাল কি হয় এটা তো বলা যায়না। ফেসবুকে কত জনে কত কিছু বলে তেমন কিছু তো হতে দেখিনি। বিপদ তো এই দেশে রাস্তায় চলতে গেলেও বিদ্যমান।” উনি কোন রেসপন্স করলেন না। আনমনে কি যেন ভাবছিলেন। চারুকলায় আমাদের বানানো জিনিসপাতি রেখে বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে শেষে ভাইয়ার বাসায় চলে আসলাম। সেদিন আমরা যখন রাস্তায় তখন ভূমিকম্প হয়েছিলো। স্বাভাবিকভাবে মানুষের ঢল নেমে এসেছিল রাস্তায় তাই আমাদের বাসায় ফিরতেও দেরি হয়েছিলো। তার বাসাতেই থাকবো তাই কোন তাড়াহুড়ো ছিল না। হুট করে মনে পড়লো যে আমার একটি জিনিস পৌঁছে দিতে হবে আমার বোনের কাছে যার বাসা ভাইয়ার বাসা থেকে মিনিট মিনিট এর দূরত্ব। আমি সেই কাজ সেরে যখন ফেরত আসলাম তখন দেখি সবার চোখেমুখে কেমন এক হতাশা । এমন অবস্থা যে ভয়ে কাউকে জিজ্ঞেসও করতে পারছিলাম না কি হয়েছে। কিছুক্ষণ পরে জানলাম। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে র‍্যালি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানে অংশগ্রহণ করার জন্য ইতিমধ্যে তিনশ’র মত মানুষ নিশ্চিত করেছে। এই মাঝরাতে এত মানুষকে ফোন করে জানানো সম্ভব নয়। শেষে এই সিদ্ধান্তে আসা হল যে, যেখানে সবার দেখা করার পরিকল্পনা ছিল সেখানে গিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে যে র‍্যালি হচ্ছে না। মনে অনেক কষ্ট ও দেশের আইনের উপর ক্ষোভ নিয়ে সবাই ঘুমিয়ে পরলাম। তারপরেও জুলহাজ, তনয় ও আরেকজন ভাইয়া যেন অন্য কোন কিছু নিয়ে চিন্তিত।

সকালে সবাই রেডি হয়ে একেকজন একেক রঙের পাঞ্জাবী পরে রওনা দিলাম শাহবাগের উদ্দেশ্যে। সেখানে আগত বন্ধুদের জানিয়ে দেওয়া হল যে নিরাপত্তার কথা ভেবে র‍্যালি হচ্ছে না। সবারই মন খারাপ হয়েছিল কিন্তু পরিস্থিতি বিবেচনা করে কেউ কোন কথা বলল না। কিন্তু কিছু বন্ধু জুলহাজ ভাইয়ের কাছে আবদার করলো যে আমাদের বানানো কাগজের সামগ্রীগুলো তারা ব্যবহার করবে। ভাইয়ার বারণ করা সত্ত্বেও তারা কিছু কিছু সামগ্রী নিলো এই আশ্বাস দিয়ে যে কিছুই হবেনা।

যথারীতি সময়ে চারুকলা থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হল। আমরাও যোগদান করলাম পূর্বের রাতের ও বিগত বছরের গ্লানি ভুলে গিয়ে আনন্দ বুকে নিয়ে। কিন্তু সবার বুকে একই আনন্দ ছিল না। আমি বেশ পিছনে ছিলাম। কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে খেয়াল করলাম জুলহাজ ভাইয়ার কালো চশমা থেকে গালবেয়ে পানি। মাথা হুট করে কাজ করা বন্ধ করে দিল। ভাইয়াকে কখনো এমনভাবে কান্না করতে দেখিনি। আর মানুষ কান্না করলে কি করে কি বলে সান্ত্বনা দিতে হয় এই ব্যাপারে আমি খুবই অজ্ঞ। দেখলাম আমাদের এক মেয়ে বন্ধু সেটা খেয়াল করেছে এবং ও সাথে সাথে ভাইয়ার হাত ধরে নিয়ে গেল গান-বাজনা-নাচে জমজমাট র‍্যালির অংশে।

শোভাযাত্রা শেষ হল। সবাই যার যার মত এদিক সেদিক ছড়িয়ে পড়লো। এদিকে আমার প্ল্যান ছিল আবার জুলহাজ ভাইয়ার বাসায় গিয়ে আমার ব্যাগ নিয়ে নিজের বাসায় গিয়ে ঘুমানো। চারুকলার দিকে হাঁটা শুরু করলাম এই আশায় যে কাউকে হয়তো পেয়ে যাব আর আড্ডা দিতে দিতে লম্বা পথ পাড়ি দেওয়া যাবে কারণ নববর্ষের দিনে রিকশা পাওয়ার থেকে লটারি জেতা সহজ। সেখানে গিয়ে দেখলাম কিছু নতুন ছেলে যারা এ বছরের রূপবান ইয়ুথ লিডারশীপ ট্রেনিং-এ যোগ দিয়েছিল। তখন তেমন কথা হয়নি তাই পরিচয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এগিয়ে গেলাম। আমরা কথা বলছি এমন সময় এক টিভি চ্যানেলের সংবাদকর্মী এগিয়ে এলো ইন্টার্ভিউ নেবার জন্য। আমি দূরে চলে গেলাম কারণ এমন হুট করে কিছু বলতে আমি পারিনা। আরেকজন ও এলো আমার সাথে একই কারণে। ওদের কথা শেষ হলে আমরা বাংলা একাডেমীর দিকে পা বাড়ালাম। আমি ভাবছিলাম টিএসসি থেকে অন্য পথে চলে যাব কারণ ক্লান্ত লাগছিল।

কাজী নজরুল ইসলাম-এর সমাধি আর মসজিদ পার করে যাত্রী ছাউনির দিকে যাবার সময় হুট করে পুলিশ ডাক দিল। ভাবলাম অন্য কাউকে ডাকছে তাই থামলাম না প্রথমে। কিন্তু আমার সাথের অন্যরা থেমে গেলে বুঝলাম আমাদেরকেই ডাকছিল। এগিয়ে গেলেই পুলিশ বডি-সার্চ করা শুরু করল। কারো কাছেই কিছু পেল না। একজনের হাতে একটা রঙ্গিন কাগজে মোড়ানো গিফট বক্স ছিল। তন্ন তন্ন করে সেটাও তল্লাশি করল। কিছু না পাওয়ার পরেও যখন ছাড়ছে না তখন বুঝলাম সামনে বড় বিপদ আছে। সাথে সাথে ফোন বের করে প্রথমেই আম্মু এবং আব্বুর নাম্বার মুছে ফেললাম এবং জুলহাজ ভাইয়ার নাম্বার “আব্বু” নামে শেভ করলাম। পুলিশ বলল কিছু ব্যাপারে উনার ওসি সাহেব আমাদের সাথে কথা বলতে চান। কথা বলেই ছেড়ে দিবে। আমাদের পাঁচ জনকে নিয়ে গেল শাহবাগ থানায়। যখন নিয়ে যাচ্ছিল তখন কোনমতে জুলহাজ ভাইয়াকে একটি ম্যাসেজ দিতে পেরেছিলাম কি হয়েছে এটা বলে। উনি সাথে সাথে রিপ্লাই দিলেন যে উনি আসছেন।

ওসি’র কাছে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম ঘটনা। আমাদের বন্ধুরা যারা ওই সংবাদকর্মীর কাছে ইন্টার্ভিউ দিয়েছিল তারা কোন এক ফাঁকে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছিল। এখন ঐ সংবাদকর্মী সেটা পুলিশকে জানিয়েছিল নাকি পাশে থাকা কোন পুলিশ শুনে টার্গেট করেছিল তা বুঝিনি। ওসি আমাদের সবার ফোন নিয়ে নিলো। এ পর্যায়ে কয়েকজন ভয় পেয়ে পুলিশের সাথে তর্ক করা শুরু করে পুলিশকে আরও রাগিয়ে দেয়। দুই পক্ষের তর্কাতর্কির সুযোগে আমি পুলিশের ড্রয়ার খুলে নিজের ফোন নিয়ে নিলাম। এরপর বিরক্ত হয়ে ওসি আমাদের লকআপে রাখার আদেশ দিল। পুলিশের কক্ষ থেকে বের হয়েই দেখি জুলহাজ ভাইয়া। যেতে যেতে তাকে যতটুকু বলা যায় বললাম ও আমার ফোনটি তার হাতে দিলাম। বুঝতে পারলাম জুলহাজ ভাইয়া অনেক আপসেট। কারাগারে ঢুকাল আমাদের কিন্তু যেন বন্দি হয়ে গেলেন জুলহাজ ভাইয়া।

সকাল এগারোটায় শুরু হয়ে পুলিশি হেনস্তা চলল পুরো চৌদ্দ ঘণ্টা। এই দীর্ঘ সময়ে এক মুহূর্তের জন্যও জুলহাজ ও তনয় ভাইয়াকে দৃষ্টির বাইরে দেখিনি। কিছুক্ষণ পর পর একজন এসে সাহস দিয়ে যাচ্ছিল এবং ওদিকে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা করছিল আমাদের তাড়াতাড়ি বের করতে। আমাদেরকে আবার ডাকা হল। যত উপায়ে সম্ভব অপমান করা হল। পুলিশ নির্দেশ দিল মা-বাবাকে আসতে হবে। অসহায় হয়ে করুণ দৃষ্টিতে জুলহাজ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। আশ্বাস দিল কিছু হবেনা। এই আশ্বাসেই বিশ্বাস পেলাম। নাম্বার বললাম পুলিশকে। পুলিশ কল দিয়ে যা তা বলে মা-বাবা কে ভয় দেখিয়ে থানায় আসতে বলল। জীবনে এতো অপমানিত কখনো হইনি। ত্রিশ মিনিট পর মা যখন এলো খুবই লজ্জিত লাগছিল। পুলিশ তাকেও অপমান করার সকল চেষ্টা করল কিন্তু মা মাথা ঠাণ্ডা রাখল। মা’র কথা শুনে মনে হল উনি আসল ঘটনা সম্পর্কে অবগত। কিভাবে জানল তা বুঝে উঠতে পারলাম না। সকল ফর্মালিটি সম্পূর্ণ করে থানা থেকে বের হয়েই ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম। উনার আপ্রাণ চেষ্টার কারণে এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি। তখন বুঝতে পেরেছিলাম কিভাবে আমার মা আসল ঘটনা জানতে পেরেছে। পুলিশকে নাম্বার বলার সময় ভাইয়া নাম্বার টুকে নিয়ে আমার বাসায় কল করে সান্ত্বনা দিয়ে আসল ঘটনা জানিয়েছিল। আমার আব্বু-আম্মু বার বার বলছিল তারা জুলহাজ, তনয় ও আরেকজন ভাইয়ার কাছে চির ঋণী । আমি বের হওয়ার পর জুলহাজ ভাইয়া, তনয় ভাইয়া ও অন্য ভাইয়াটি আবার থানায় গেলেন কারণ তখনও ২ জনকে আটক ছিল।

এই ঘটনা থেকে মুক্তি দিয়েই ভাইয়া থেমে যাননি। পরের দিন থেকেই সকল প্রকার সাহায্য দিয়েছিল যেন এই মানসিক আঘাত থেকে রেহাই পাই। একদিন যেতে বলল ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু কাজ হবে সেটা দেখতে ও আড্ডা দিতে। সেদিন ক্লাস শেষে যখন যাচ্ছিলাম ওনার বাসায় তখন এক বন্ধুর ফোন এলো। শুনলাম আমার জীবনের সবচেয়ে নির্মম সত্য। জুলহাজ আর তনয় ভাইয়াকে মেরে ফেলা হয়েছে। পৃথিবী তখনই কেমন জানি থমকে গেল।
আজকে এক বছর হতে চলল। এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন এলো জীবনে। কিন্তু এমন কোন দিন যায়নি যেদিন তাদের কথা মনে পড়েনি। জানি তারা আজও আছেন। অবশেষে শান্তিতে। কিছু মানুষ নিজ প্রয়োজনে সংগ্রাম করে তো কিছু মানুষ সহজ জীবন ও উপায় ত্যাগ করে সংগ্রাম করে চলে সৎ ও সত্যের জন্য। জুলহাজ ও তনয় ভাইয়া ছিল সত্যকে সবার সামনে তুলে ধরার মত মানুষ। দুজনের চরিত্রে কিছু মিল একটু বেশি অমিল থাকলেও একসাথে অসাধারণ সব আইডিয়া বানাত। তাদের সাথে থেকে আমি যে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করেছি তা অন্য কোন মাধ্যমে পেতাম কি না ভাবতেও পারিনা। বিশেষ করে জুলহাজ ভাইয়া তার মাধ্যমেই শিখেছি কিভাবে জাজমেন্টাল না হতে।

প্রথম দেখাতে কোন মানুষকে নিয়ে চট করে ধারণা করার একটু বাজে স্বভাব ছিল আমার। জুলহাজ ভাই সবাইকে একই পাল্লায় মাপতেন। উচ্চপদের সাহেব টাইপের লোকদের যেভাবে বরণ করতেন পল্লীগ্রামের মানুষকেও একই আন্তরিকতায় গ্রহণ করতেন। তিনি সবসময় মানুষের সেরা দিকটিই দেখতেন এবং তাদের উপর বিশ্বাস রেখে শ্রেষ্ঠ গুণগুলো বের করে আনতেন। আমার এখনও মনে আছে, প্রথম দিকে আমি খুবই লাজুক ধরণের ছিলাম। সহজে মিশতে পারতাম না। উনি খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে কোন কোন কাজে আমার নিজের আত্মবিশ্বাস ছিল না সেখানে উনি আমার উপর পুরো আস্থা রেখে বিশ্বাস যোগান দিতেন। ছোট থেকে বড় সকল বিপদে তার কাছে ছুটে যেতাম। কখনো পরামর্শ নেয়ার জন্য তো কখনো সরাসরি সাহায্যের জন্য। নতুন নতুন যেসব ছেলে-মেয়ে আসত বা আমাদের কাজের সম্পর্কে যাদের তেমন ধারণা ছিল না বা যাদের অল্প ধারনা ছিল, তারা প্রায়ই জিজ্ঞেস করত “উনি কি তোমাদের লিডার?”। না, উনি কখনো নিজেকে লিডার দাবী করতেন না কিন্তু কিছু কিছু মানুষের কিছু গুণ প্রতিফলিত হয় আপন মহিমায়। কি এক অবয়ব আকর্ষণে উনি আমাদের সবার পিতৃতুল্য বা বড় ভাইয়ের মত এক ফিগার-এ পরিণত হয়েছিলেন। বিচক্ষণতার গুণে উনি আমাদের সবারই বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। তাই তার যে কোন কথা/আদেশ চোখ বন্ধ করে পালন করা যেত।

জীবনে এখন যাই করি না কেন তার আদর্শে উৎসারিত আমার সকল সিদ্ধান্ত।